আমিয়াখুম জয়ের কাহিনি 

প্রথমেই দুখিঃত ভালো মানের ছবি দিতে না পারাই, ভালো মানের মোবাইল টি পানিতে পড়ে নষ্ট হয়ে যায় ,তবে,ছবিতে না যতটুকু ভালো লাগবে,, সত্যি বলতে এর থেকে যায়গাগুলো আরো অনেক বেশি সুন্দর,মনোরম ও এডভেঞ্চারে ভরপুর।
ট্যুর প্ল্যান বিস্তারিত >>.
আমরা ছিলাম ১০ জন,, আমরা ৩ ফ্রেন্ড ছাড়াও ঢাবির ৭ জন বড় ভাইদের গ্রুপে এড হয়ে যাই,ঈদের মৌসুম ছিলো তাই একটি বড় গ্রুপ পেতে খুব একটা বেগ পেতে হয়েছিলো না।
অতঃপর, ঈদের পরের দিন রাতেই রউনা হয়ে যাই, সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে, বান্দরবান পৌঁছাতে পৌঁছাতে ভোর হয়ে যায়।
১ম দিন> বান্দরবন সদর থেকে রিজার্ভ চান্দের গাড়ি করে থানচি যাই,সেখানে আগে থেকেই আমাদের গাইড সাইফুল ভাই ছিলেন,,পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে টুকটাক কিছু কেনাকাটা করে তারপর হালকা নাস্তা করে নৌকায় করে রোমাক্রি চলে আসি,এখানে বলে রাখা ভালো অনেকেই সরাসরি রোমাক্রি না এসে পদ্মঝিরি হয়ে আসে। রোমাক্রি আসার পথে সাঙ্গু নদীর উত্থাল পাত্থাল ঢেউ সামলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রতিটা মুহুর্তে থ্রিল থ্রিল মনে হয়েছে, কেই বা জানতো সেটা তো মাত্র শুরু, তারপর থেকে শুরু হবে আসল গেম মানে হাটা।রোমাক্রি তে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর হাটা শুরু করি,লক্ষ্য থুইসাপারা। একটানা ৩.৩০ ঘন্টা হাটার পর আমরা নাফাখুম পৌছাই। এর মধ্যই আমাদের ৫ বারের মত ভয়ানক স্রোতবাহি নদী পার হতে হয় (বর্ষায় গলা পর্যন্ত পানি ছিলো, মাথায় ব্যাগ নিয়ে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে চলেছি)। এইরকম খ্ররস্রোতের পাল্লায় পড়ে আমার বন্ধুর জুতা স্রোতের গভিরে হারিয়ে যায়। খালি পায়ে পুরা ৪ দিন সফর করতে হয়েছিলো তাকে।
নাফাখুম দেখার পর আসলেই এক মুহুর্তের জন্য সব কষ্ট ভুলে গিয়েছিলাম,তখনই বুঝেছিলাম কেনো একে বাংলার নায়েগ্রা বলা হয়।কিন্তু আমাদের সেখানে বেশিক্ষণ থাকার সুযোগ নেই,কেনোনা এখনো অনেক পথ বাকি। অতঃপর কিছুক্ষন সেখান রেষ্ট নিয়ে থুইসাপারা উদ্যেশে রওনা দেই , আরো ৪ ঘন্টা নদী-পাহাড় হাটার পর চলে আসি সাং দের পাহাড় থুইসাপারা। এরমধ্য আরো ৪-৫ বারের মত নদী পার হতে হয়েছে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হলো আপনি কখনো গাইড কে জিজ্ঞেস করে সঠিক উত্তর পাবেন না।উনাকে যদি বলি আর কতক্ষন লাগবে পৌঁছাতে,গাইড বলে ১০ মিনিট কিন্তু সেই ১০ মিনিট ১ ঘন্টার চেয়েও বেশি।আমরা আমাদের গাইড সাইফুল ভাইয়ের সাহায্য নিয়ে জুয়েল ভাই(কুম্ভ ভাই) এর বাসায় উঠি। সেখানে পৌঁছাতে আমাদের প্রায় রাত হয়ে যায়,সেখানে রাতে খেয়ে শুয়ে পরি,
.
২য় দিন>>>
সকালে আমিয়াখুমের জন্য রেডি হচ্ছিলাম,,কিন্তু শুনি বড়ভাইদের ৫ জন আর যাবে না,তারা হাল ছেরে দেয়,আমরা বাকি ৫ জন রওনা দেই। ১৫ মিনিট পর দেবতা পাহাড় উঠতে যেতে আরেক ভাই হাল ছেড়ে দিয়ে ফিরে চলে যান,,আমরা ৪ জন হয়ে যাই।তারপরও হাটা থামাই নি। টানা ২.৩০ ঘন্টা খাড়া পাহাড় বেয়ে নেমে আমিয়াখুম পৌছাই, এর মধ্য বহুবার জোকে ধরেছিলো তাও আবার টাইগার জোক।বৃষ্টির কারনে গাছের পাতা থেকে যে জোক গায়ের উপর পড়তে পারে সেটা তখন বুঝেছিলাম। আমিয়াখুম যেতে পাহাড় বেয়ে নামার সময় যেনো নিজের মৃত্যু দেখেছি।একটু ভুল হলেই হারিয়ে যাবো,লাশ ও খুজে পাওয়া যাবে না।এত কষ্টের পরও এই অসাধারণ কিছু মুহুর্ত কাটাতে পেরেছিলাম কিন্তু কষ্ট হয় তখন যখন ভাবি এই খাড়া পাহাড় আবার বেয়ে উঠতে হবে।কিন্তু ঝর্নার রাণী আমিয়াখুম না দেখলে কি আর ট্যুর সম্পুর্ন হতো? তারপর সাতভাই খুম,ভেলাখুমের উদ্দেশ্য যাত্রা শুরু করি। দুপুরের পর ফিরে আসার জন্য রওনা দেই এবং আমরা থুইসাপারা ফিরি, সেখান থেকে আমাদের পদ্মঝিরি হয়ে ফেরার কথা ছিলো কিন্তু ওই রাস্তার গল্প শুনে আগের রাস্তায় ফেরত যাওয়ার সিধান্ত নেই।
.
৩য় দিন>>
এভাবেই আবার আগের পথ দিয়ে ৭ ঘন্টা হেটে থানচি চলে আসি। এর মধ্যে রোমাক্রি ফলস এ গোসল করি। সে এক নতুন অভিজ্ঞতা,বডি ব্যায়াম যাকে বলে।
বলে রাখা ভালো, ট্যুর প্রস্তুতি হিসেবে ৩০ দিন ম্যালেরিয়া ওষুধ খেয়েছি সাথে ওডোমাস ক্রিম নিয়েছি।
রুট>>> বান্দরবন -থানচি- রোমাক্রি -নাফাখুম -থুইসাপারা -আমিয়াখুম -সাতভাই খুম-ভেলাখুম।
বিঃদ্রঃ ট্যুর শেষে ৩ দিনের ভিতর আমদের মধ্য একজন ভাই অস্বাভাবিক ভাবে মারা যান।মশার কামর খেয়ে মারা গেছে ধারনা করা হলেও আসল কারন আজও অজানা।
লেখাঃ রাফায়েতুল ইসলাম রূপম
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়